ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে ‘যোগসাজশের’ অভিযোগে ইরানে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে ‘যোগসাজশের’ অভিযোগে ইরানে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলের সঙ্গে যোগসাজশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দেশটির বিচার বিভাগের সংবাদ সংস্থা মিজান–এর বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। দণ্ডিতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও, তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের খোররামশাহরে সশস্ত্র ও বোমা হামলায় জড়িত জাতিগত আরব বিচ্ছিন্নতাবাদী। ওই হামলায় চারজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিলেন। একই মামলায় সপ্তম ব্যক্তি সামান মোহাম্মদী খিয়ারেহ নামের এক কুর্দিকে ২০০৯ সালে কুর্দিশ শহর সানন্দাজে সরকারপন্থী ধর্মীয় নেতা মামুস্তা শেখ আল–ইসলাম হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, খিয়ারেহকে কিশোর অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং দীর্ঘদিন আটক রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের সময় তার বয়স ছিল ১৯, তবে হত্যাকাণ্ডের সময় মাত্র ১৫ বা ১৬ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ইরানে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বাহমান চৌবি আসল নামের আরেক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করে ইরান। মিজান অনলাইন–এর তথ্যমতে, তিনি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য কাজ করতেন বলে অভিযোগ ছিল।

চলতি বছরের জুনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত হয়, যাতে উভয় দেশ একে অপরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যুদ্ধ শেষে ইরান ঘোষণা দেয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করা হবে। এরপর থেকে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

আগস্টের শুরুতে ইরান রুজবেহ ভাদি নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যিনি এক ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীর তথ্য ইসরায়েলের কাছে সরবরাহ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। গত ৯ আগস্ট ইরানের বিচার বিভাগ জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এদিকে, গত জুলাইয়ে ইরানের সংসদে নতুন আইন পাস হয়, যেখানে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করলেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, সামরিক বা প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান কিংবা এ দেশগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ ‘পৃথিবীতে দুর্নীতি’ হিসেবে গণ্য হবে— যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

আইনে আরও উল্লেখ আছে, অননুমোদিত ইন্টারনেট সরঞ্জাম, যেমন স্টারলিংক ডিভাইস ক্রয়-বিক্রয় বা সংরক্ষণ করাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব ডিভাইসের ১০টির বেশি উৎপাদন বা আমদানির দায়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (IHR) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম ২৬ দিনেই ইরান সরকার ৫৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। সংস্থাটির মতে, হিজাববিরোধী আন্দোলন দমন ও ভয় সৃষ্টির কৌশল হিসেবেই এসব ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে।

আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, “এই মৃত্যুদণ্ডগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কার্যকর করা হচ্ছে— সরকারের লক্ষ্য জনগণের মধ্যে ভয় তৈরি করা।”

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!