ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৫৩, দুর্ভিক্ষে মৃত বেড়ে ৪২২

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৫৩, দুর্ভিক্ষে মৃত বেড়ে ৪২২

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন অভিযানে গাজায় আরও অন্তত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু গাজা সিটিতেই ধ্বংস হয়েছে একাধিক উঁচু ভবন। এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২২ জনে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির ১৬টি ভবনে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি বড় আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, রোববার নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ছিলেন গাজা সিটির বাসিন্দা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অপুষ্টিতে আরও দুইজন মারা গেছেন। ফলে ক্ষুধাজনিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৪২২।

রেমাল এলাকার দক্ষিণে অবস্থিত আল-কাওসার টাওয়ারও বিমান হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অব্যাহত বোমাবর্ষণের কারণে হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিপর্যস্ত বাসিন্দা মারওয়ান আল-সাফি বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব। এই পরিস্থিতির সমাধান দরকার... আমরা এখানে মরছি।”

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, এই হামলা মূলত গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য চালানো হচ্ছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আড়ালে আসলে “স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শহর ও আবাসিক ভবন, তাঁবু এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দপ্তর” ধ্বংস করছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে লিখেছেন, গত চার দিনে সংস্থাটির ১০টি ভবনে হামলা হয়েছে— এর মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিকও ছিল, যেখানে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়।”

ইসরায়েল আল-মাওয়াসির অঞ্চলকে “নিরাপদ এলাকা” ঘোষণা করলেও সেখানেও একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছে মানুষ। উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত আহমেদ আওয়াদ জানান, শনিবার মর্টার হামলার মধ্যেই তিনি প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তার ভাষায়, “মধ্যরাতে এসে দেখি পানি নেই, টয়লেট নেই, কিছুই নেই। পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ।”

অন্যদিকে আবেদআল্লাহ আরাম নামের এক বাসিন্দা জানান, তার পরিবার তীব্র পানির সংকটের মধ্যে রয়েছে। খাদ্যও খুব সীমিত, শিশুরা অপুষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছে। তিনি বলেন, শীত এগিয়ে আসছে, নতুন তাঁবুর তীব্র প্রয়োজন, আর বেশি মানুষকে এই এলাকায় রাখা সম্ভব নয়।

আরেকজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আসার পরও আমি আশ্রয় পাইনি। আমার বড় পরিবার আছে— শিশু, মা, দাদীসহ। শুধু বোমা নয়, ক্ষুধাও আমাদের গ্রাস করছে। দুই বছর ধরে আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছি। এই গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কোনো আয় নেই, বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছু নেই। বাস্তুচ্যুত হওয়া মানে যেন প্রাণটা শরীর থেকে টেনে বের করে নেওয়া।”

ইউনিসেফও সতর্ক করেছে যে আল-মাওয়াসির পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম আল জাজিরাকে জানান, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি এই কথিত মানবিক অঞ্চলও না। প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে মানুষের ভিড় বাড়ছে।”

তিনি একটি উদাহরণ দেন— এক নারী গাজা সিটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর রাস্তার ধারে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হন। ইঙ্গ্রাম বলেন, “এ রকম হাজারো পরিবার এখানে এসেছে এবং এখন টিকে থাকার জন্য ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাতে সংগ্রাম করছে।”

Link copied!