ঢাকা শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
রাজনীতিবিদদের প্রতি ডিম ছোড়া

প্রতিবাদ জানাতে ডিম নিক্ষেপ করা হয় কেন?

বিবিধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫

প্রতিবাদ জানাতে ডিম নিক্ষেপ করা হয় কেন?

ছবিঃ সংগৃহীত

রাজনীতির মঞ্চে বা জনসমক্ষে ক্ষোভ প্রকাশের একটি পরিচিত মাধ্যম হলো ডিম নিক্ষেপ। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ খাবার হলেও প্রতিবাদের সময়ে এটি প্রতীকি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই প্রবণতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে ডিম ছুড়ে মারেন। এতে গাড়ির সামনের কাচ ঘোলা হয়ে যায়। এর আগেও রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা আদালত প্রাঙ্গণে ডিম ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।

কেন মানুষ প্রতিবাদ জানাতে ডিম ব্যবহার করে—এ নিয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেন, খাবার ছুড়ে মারার অন্যতম কারণ হলো এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান। তিনি ব্যাখ্যা করেন, টমেটো বা ডিম নিক্ষেপ করা সহজ, দাম কম এবং ভাঙলে এক ধরনের প্রতীকী সন্তুষ্টি সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, ডিম বা টমেটো ছোড়া অহিংস প্রতিবাদের একটি ধরন। কারণ, পাথর বা ঢিল নিক্ষেপ করলে সহিংস প্রতিক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু ডিম ছোড়ার জবাবে সহিংস প্রতিরোধ করলে তা বরং কর্তৃপক্ষকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, মধ্যযুগে বন্দীদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে গিয়ে তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হত। ১৮শ শতক থেকে এর লিখিত নজির পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল আয়েল অফ ম্যান-এ মেথোডিস্টদের ওপর ডিম ছোড়ার ঘটনা নথিভুক্ত আছে।

১৮৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে দাসত্ববিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার সময় কবি জর্জ হোয়াইটার লক্ষ্যবস্তু হন ডিম নিক্ষেপকারীদের। ১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজকে জনসভায় ডিম ছুঁড়ে আঘাত করা হয়েছিল, যা সে সময় কনস্যক্রিপশন বিরোধী আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে।

২০০১ সালে ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন তরুণ কৃষক ডিম ছুড়ে মারেন। উত্তরে প্রেসকট ঘুষি মারেন এবং মুহূর্তটির ছবি বিশ্বমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর প্রার্থী আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার প্রচারণার সময় ডিমের শিকার হলেও নির্বিকারভাবে সামলে নেন বিষয়টি।

২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ডিমে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ২০১১ সালে আফগানি বিক্ষোভকারীরা জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কনস্যুলেটের দিকে ডিম নিক্ষেপ করে। ২০১৩ সালে ফরাসি কৃষকরা ডিমের দাম কমে যাওয়ার প্রতিবাদে প্রতিদিন এক লাখ ডিম ভাঙার ঘোষণা দেয়। একই বছর লন্ডনে কিছু বিক্ষোভকারী প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিনে ডিম ছোড়ার হুমকি দিয়েছিল, যদিও কঠোর নিরাপত্তার কারণে তারা তা করতে পারেনি।

সব মিলিয়ে ডিম নিক্ষেপকে বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রতীকি প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হয়েছে। এটি সহিংসতার পরিবর্তে বিদ্রূপ, ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশের এক রূপক, যা ইতিহাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমাজ-রাজনীতিতে বারবার ফিরে এসেছে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!