দরজায় কড়া নাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ২০১৯ সালের নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনার পর দীর্ঘ ৬ বছর পর আবারও হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। সবচেয়ে সুন্দর এবং অংশগ্রহণমূলক ডাকসুর আশায় উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রচার প্রচারণা।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে দলমত নির্বিশেষে প্রচার-প্রচারণা। বিভিন্ন ইউনিক আইডিয়া বের করে ভোট নিজের করে নিতে আদা-জল খেয়ে নেমেছেন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেউবা দিচ্ছেন ভিজিটিং কার্ড, কেউবা চিঠির খাম, কেউ হ্যান্ডবিল কেউবা লিফলেট। তবে একজন রীতিমতো ‘লিগ্যাল নোটিশ’ দিয়েও নজরে এসেছেন শিক্ষার্থীদের।
অভিনব প্রচারণা পদ্ধতির মধ্যে একটি ‘লিগ্যাল নোটিশ’। অভিনব এই ‘লিগ্যাল নোটিশটি’ পাঠিয়েছেন মেহেদী হাসান মুন্না। ডাকসু নির্বাচনে তিনি ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে 'আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক' পদে লড়ছেন। তার প্রচারপত্রে লেখা রয়েছে, ‘ডাকসু নির্বাচনে মুন্নাকে অবশ্যই ভোট দেবেন। নচেৎ আপনার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো।’
মুন্নার এই অভিনব প্রচারণা অনেকের নজর কেড়েছে। নোটিশে তিনি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন। লিগ্যাল নোটিশের শুরুতে মুন্না লিখেছেন, ‘প্রাপক: ঢাবির সর্বাপেক্ষা সুন্দরী রমণী এবং সুদর্শন পুরুষ।’
এতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতাকে মানবাধিকারের পক্ষে অনুরোধ করে এই মর্মে অবহিত করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানবাধিকার পড়ালেও কাঠামোগত ও গঠনতান্ত্রিক সংঘাত দ্বারা শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে। মু. মেহেদী হাসান মুন্না পূর্ব এবং বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও অধিকার আদায়ের লড়াই করতে চায়।’
এছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীরা নিয়েছেন নানা অভিনব কৌশল। শিক্ষার্থীদের ভোট আদায় করে নিতে যেন চেষ্টার ত্রুটি নেই প্রার্থীদের মধ্যে।
২৬ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচারণা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রার্থীরা না কায়দায় তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ টাকার বা ডলারের আদলে হ্যান্ডবিল বানিয়ে রুমে রুমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, কেউ বা গানে গানে নিজের প্রচারণা চালাচ্ছেন, ফুটপাতে নিজের ব্যালট নাম্বারের সাথে গেঞ্জির দাম মিলিয়েও প্রচারণা করতে দেখা গেছে একজনকে, কবিতা আবৃত্তি, ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেও প্রচারণা করছেন অনেকে।
টাকার আদলে লিফলেট ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছেন মোহতাসিম বিল্লাহ হিমেল। এছাড়াও আরাফাত নামক এক প্রার্থীও আলোচনায় আসেন এমন অভিনব প্রচারণার জন্য। আরাফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা-কালো এ নোটের এক পিঠে দেওয়া হয়েছে একটি কিউআর কোড, যেটি স্ক্যান করলেই পাওয়া যাচ্ছে প্রার্থীর ইশতেহার।
এবছর ভিন্ন একাধিক প্রচারণা চালিয়েছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী ইব্রাহীম আদল। তিনি আসিফ নজরুলের ‘আমি যদি কোনোদিন কোনো মন্ত্রণালয় বা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতাম, জীবন দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য কাজ করতাম’—কথা সংবলিত ভিডিওটি নকল করেছেন।
জারি গান গেয়ে নিজের ইশতেহার তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন। ডাকসু নিয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালাতেই গান গেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিনব আরেকটি প্রচারণার নজির দেখিয়েছেন জহিন ফেরদৌস জামি। তিনি ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। জামি প্রচারণায় যুক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা খেলোয়াড়দের। তার পক্ষে প্রচারণা করেছেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মুরসালিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তৌহিদ হৃদয়, তানজীম হাসান সাকিব, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসাইন ইমন এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাপ্টেন প্রান্তিক নওরোজ নাবিল।
এসব প্রচারণায় শিক্ষার্থীরা খুশি হচ্ছে এবং তাদের গ্রহণ করছেন বলে মনে করছেন প্রার্থীরা। তারা বলছেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে প্রচারণায় নতুনত্ব আনায় ভোটাররা তাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
প্রার্থী মোহতাসিম বিল্লাহ হিমেল বলেন, গতানুগতিক ধারার লিফলেট ভোটাররা পড়ছে না। আমি নির্বাচিত হলে কী করবো, তা যদি মানুষ না জানে, তাহলে এটা তো ঝামেলার। সে কারণে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :