ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

হিজাব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ক্ষমা চাইলেন রাবি অধ্যাপক আ-আল মামুন

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫

হিজাব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ক্ষমা চাইলেন রাবি অধ্যাপক আ-আল মামুন

ছবিঃ সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন হিজাব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তার মন্তব্য ঘিরে সোমবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক আ-আল মামুন তার পোস্টে লেখেন, “আমি এক এগারোর সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করে জেলে গিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি—ক্যাম্পাসে এবং এর বাইরে, ফেসবুক পোস্ট ও লেখালেখির মাধ্যমে। সেসব কার্যক্রম এখনো অনলাইনে ছড়িয়ে আছে।”

তিনি আরও লেখেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় আমি সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, শিক্ষক হিসেবে আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা দিয়েছি। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের সময় একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাকে গভীরভাবে হতাশ করেছে।”

অধ্যাপক মামুন বলেন, “হতাশার মুহূর্তে আমি এমন কিছু লিখেছি যা আমার লেখা উচিত হয়নি, এমনকি লেখার ইচ্ছাও ছিল না। পোস্টটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা হতে পারে বুঝতে পেরে আমি সঙ্গে সঙ্গেই তা মুছে ফেলি। পোশাক বিষয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার—আমি কারও পোশাক দেখে বড় বা ছোট ভাবি না। বরং হিজাব রক্ষায় আগেও অনেক পোস্ট দিয়েছি।”

তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমার উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে উপহাস করা বা তাচ্ছিল্য করা। আমি মুহূর্তের আবেগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, যা ভুলভাবে বোঝা হয়েছে। পোস্টে কোনো লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার ছিল না, কারণ সেটি আমি দ্রুত সরিয়ে ফেলেছিলাম। কেউ সেটির স্ক্রিনশট নিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে।”

অধ্যাপক আ-আল মামুন তার পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, “আমার কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি সব সময় শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনা করি। আশা করি, আমার পোস্টকে ঘিরে যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা এখন প্রশমিত হবে। আমি চাই না, আমার কারণে আমার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কোনো অস্বস্তি বা বিভেদে পড়ুক।”

অধ্যাপকের এই ক্ষমা প্রার্থনার আগে সোমবার রাত ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং তার প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। পরে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত স্মারকলিপি দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) প্রতিনিধিরা।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে অধ্যাপক আ-আল মামুন তার ফেসবুক আইডি থেকে রাকসুর নির্বাচিত হিজাব পরিহিত নারী শিক্ষার্থীদের শপথ নেওয়ার একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, “এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডোর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ খাওয়ার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!”

তার এই মন্তব্যের পর মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকে পোস্টটি ‘অশালীন ও হিজাববিদ্বেষী’ মন্তব্য হিসেবে নিন্দা জানান। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের একাংশ অধ্যাপক আ-আল মামুনের বক্তব্যকে “অযাচিত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। অন্যদিকে, অনেকেই তার ক্ষমা প্রার্থনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং বিষয়টি এখানেই সমাপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!