জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি প্রস্তুতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও পারিবারিক টানাপোড়েনের এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তিনি নিজের ছাত্রজীবনের তিক্ত স্মৃতি তুলে ধরেন।
২০০৬ সালে দাখিলে জিপিএ-৫ পাওয়া সিবগাতুল্লাহ আলিম শেষ করার পর শিবিরের পক্ষ থেকে বিশেষ কোচিংয়ে অংশ নেওয়ার ডাক পান। ঝড়ো রাতে মায়ের বাঁধা উপেক্ষা করে থানা কার্যালয়ে হাজির হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। সেখানে তাকে জানানো হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ইসলামী আন্দোলনের জন্য জরুরি এবং এজন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় এসে মামার সহযোগিতা না পেয়ে তিনি শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করে বিশেষ কোচিংয়ে ভর্তি হন। কোচিং চলাকালে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ছিল—ফোন ব্যবহার ও জানালার পর্দা সরানো নিষিদ্ধ, দিনভর পড়াশোনা, নামাজ আর সীমিত সময়ের ঘুম।
কিছুদিন পর মামা বিষয়টি জানতে পেরে শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে কোচিং ছাড়তে বাধ্য করেন। মায়ের কান্নাজড়িত অনুরোধে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে ফ্যাক্টরির চাকরিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই রাতেই দোয়া করে আল্লাহর কাছে উপায় প্রার্থনা করেন তিনি।
ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার পথে গুরুতর সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন সিবগাতুল্লাহ। তার ডান হাত ভেঙে যায়। ওই সময় জাবি শিবির সভাপতি শাকিল উদ্দিন স্বপ্ন দেখে হঠাৎ বৈঠক ডাকেন এবং কোচিং থেকে বেরিয়ে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পারেন। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার, চিকিৎসা ও পুনরায় কোচিংয়ে ফিরিয়ে আনা হয়।
হাত ভাঙার কারণে লিখিত পরীক্ষার বদলে তাকে মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়। পরে হাত ভালো হলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দর্শন বিভাগে ১৯তম হন। তবে ভাইভা বোর্ডে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত কোটার কারণে বাদ পড়ে যান তিনি।
ঘটনার বর্ণনায় সিবগাতুল্লাহ বলেন, যুগের পর যুগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হতো। ভর্তি হতে না পারলেও তিনি সবসময় দোয়া করেছেন ক্যাম্পাসটিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য কবুল করার। সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের বিজয়কে তিনি সেই দোয়ার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।

আপনার মতামত লিখুন :