দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এন্ট্রিপদকে নবম গ্রেডভিত্তিক পদসোপানের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সফল বৈঠক না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড ধরে চারস্তরীয় অ্যাকাডেমিক পদসোপান বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশে সহকারী শিক্ষক পদটি দ্বি-স্নাতক যোগ্যতার হলেও বিএড/বিপিএড কোর্স (এক বছর) দুই বছরের না হওয়ায় সে সময় পদটি পঞ্চম গ্রেডে (বর্তমানের নবম গ্রেড) অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। ১৯৯১ সালে পদটির শিক্ষাগত যোগ্যতায় প্রথম শ্রেণির স্নাতকোত্তর অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পদটি নবম গ্রেডের অধিকারী হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষক নেতারা বলেন, “এন্ট্রিপদ নবম গ্রেড কোনো দাবি নয়, এটি আমাদের বকেয়া অধিকার।”
শিক্ষকরা আরও বলেন, ১৯৯০ সালের আগে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও পিটিআই ইন্সট্রাক্টর একই সার্কুলারে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং পরস্পরের মধ্যে বদলিও হতো। ১৯৯০ সালে টিইও এবং ১৯৯৬ সালে ইন্সট্রাক্টররা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা আজও দ্বিতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেছেন। তাদের মতে, “বৈষম্যের প্রতিশব্দ যদি খুঁজতে হয়, মাউশির বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা এবং বিশেষভাবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদটির নামই নিতে হবে।”
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বা অধিদপ্তরের অনেক পদ নবম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষক পদ এখনো দশম গ্রেডে রয়ে গেছে। একই অধিদপ্তরের দুটি শাখা হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার। এর মূল কারণ হলো কলেজ শাখার প্রবেশপদ যেখানে নবম গ্রেড (ক্যাডার), সেখানে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার প্রবেশপদ একটি অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দশম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদ।
তারা বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগযোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এর সঙ্গে বিএড/বিপিএড পেশাগত ডিগ্রিও বাধ্যতামূলক। অথচ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কলেজ শাখার সাধারণ কলেজের প্রভাষক পদে যোগ্যতা কেবল দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর। সমান যোগ্যতার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক পদের মতো সহকারী শিক্ষক পদটিকেও নবম গ্রেড ও ক্যাডার মর্যাদা দেওয়া উচিত ছিল।”
শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেন, ১৯৯১ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেও কোনো পদোন্নতি পাননি। সহকারী শিক্ষক হিসেবেই তারা অবসরে গেছেন। পদোন্নতি না হওয়ার মূল কারণ হলো প্রশাসনিক পদসংখ্যা সীমিত থাকা এবং সময়োপযোগী পদসোপানের অভাব। তারা বলেন, “এন্ট্রিপদ নবম গ্রেডভিত্তিক চারস্তরীয় পদসোপান চালু হলে শিক্ষকরাও ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অন্তত চতুর্থ গ্রেড থেকে অবসরে যেতে পারতেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার শিক্ষক সুমন মিয়া, ৩৫তম বিসিএস নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত বরগুনা জেলা স্কুলের শিক্ষক রাশিদুজ্জামানসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, “আমরা বৈষম্যের শিকার হতে চাই না। আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ কে এম আজাদ, যিনি পরিষদের সভাপতি। তিনি বলেন, “গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আমাদের সহকর্মীদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার পর বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এদিন সারাদেশের শিক্ষকরা কালোব্যাজ ধারণ করবেন। ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদসোপান নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২১ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সফল না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঈন উদ্দিন। আরও বক্তব্য দেন ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার সভাপতি আল হাশেম, ২২তম ব্যাচের প্রতিনিধি রাজিব আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ২২তম বিসিএসের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মুবীন। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দাবি ও বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরতে স্লাইড প্রদর্শন করেন ৩৫তম বিসিএস নন-ক্যাডার ব্যাচের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান।

আপনার মতামত লিখুন :