ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকায় বাস ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার ঢাবি ছাত্র সিফাত, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় আতঙ্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫

ঢাকায় বাস ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার ঢাবি ছাত্র সিফাত, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় আতঙ্ক

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত আহাম্মেদ রাজধানী থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়েছেন। রবিবার (২৬ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের মোগরাপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। পরে মুক্তি পেয়ে তিনি জানান নিজের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ কয়েক ঘণ্টার অভিজ্ঞতা।

সিফাত বলেন, “পরীক্ষা শেষ করে বিকেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে মোগরাপাড়া পর্যন্ত এসেছিলাম। সেখানে নামার পর লোকাল বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঠিক তখনই হঠাৎ পেছন থেকে দুজন লোক এসে আমাকে জোর করে একটি প্রাইভেটকারে তোলে। মুহূর্তেই চোখ, হাত ও পা বেঁধে ফেলে ছুরি ঠেকিয়ে বলে—‘চিৎকার করলেই মেরে ফেলব।’ এরপর তারা গলায় দড়ি পেঁচিয়ে সিটে বেঁধে রাখে।”

তিনি আরও জানান, অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখে তারা দাবি কমিয়ে ২ লাখ টাকায় আসে। এ সময় তারা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নেয় এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে।

“আমি বলেছিলাম, কার্ড থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যায় না। তখন তারা আমার বন্ধু ও আত্মীয়দের ফোন দিতে বাধ্য করে। একে একে কয়েকজনকে ফোন দিতে হয়েছিল, কিন্তু কেউ টাকা দিতে পারেনি,” বলেন সিফাত।

তিনি জানান, এক পর্যায়ে তার মামা ফোন করলে অপহরণকারীরা তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। তবে মামার অসুস্থতার কথা জানার পর তারা আর চাপ দেয়নি।

এরপর চান্দিনা এলাকায় পৌঁছে তারা সিফাতকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলে, “তুই যদি ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে পারিস, ছেড়ে দেব। কাউকে কিছু বলবি না।” পরে চোখ, হাত ও কোমর বাঁধা অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়।

সিফাত বলেন, “আমি হাত খোলার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু বাঁধন এত শক্ত ছিল যে পারিনি। কিছুক্ষণ পর এক তরুণকে দেখে সাহায্য চাইলে সে দৌড়ে গিয়ে কাঁচি এনে আমার হাতের দড়ি কাটে। তখন জানতে পারি আমি কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায় আছি।”

অপহরণকারীরা যাওয়ার সময় তার হাতে একটি পুরোনো ফোন দিয়ে যায়, যেটি প্রথমে বন্ধ ছিল। পরে চালু করলে দেখা যায়, সব ব্যাংকিং অ্যাপ, মেসেজ ও মেসেঞ্জার ডিলিট করা। নতুন করে অ্যাপ ইনস্টল করে তিনি দেখেন, তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

“আমার মামা গত মাসে বিদেশ থেকে নতুন ফোনটা এনে দিয়েছিলেন, দাম ছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সেটি ও মানিব্যাগের প্রায় সব টাকা তারা নিয়ে গেছে। হাতে ছিল মাত্র ১৫০ টাকা—ওটাই দিয়ে আমি বাড়ি ফিরেছি,” বলেন ঢাবি ছাত্র সিফাত আহাম্মেদ।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!