ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ঐক্যের সুর নিয়েই নির্বাচনে যাবেন: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫

ঐক্যের সুর নিয়েই নির্বাচনে যাবেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবিঃ সংগৃহীত

“জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব।” — জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসুন। ঠিক করুন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই।”

শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে সনদে স্বাক্ষর করেন। বক্তব্যের শুরুতেই অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজকের দিনটি বিশেষ। সমস্ত জাতি ও রাজনৈতিক নেতারা আজ একত্রিত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এমন দৃশ্য আমরা কল্পনাও করিনি।”

তিনি বলেন, “যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন মনে হয়েছিল হয়তো কিছু বিষয়ে একমত হতে পারবো। তাই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি যদি বুঝিয়ে কিছু করতে পারেন। অবাক হয়ে দেখলাম—সব রাজনৈতিক দল একত্রিত হলো। সবাই আলোচনা করলেন। এটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। এতদিন আমরা এমন এক জগতে ছিলাম যেখানে কোনো আইন ছিল না, শৃঙ্খলা ছিল না। এখন আমরা নতুন এক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে চলেছি। এমন একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে চাই, যাকে দেখে অন্য দেশ ঈর্ষা করবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের জন্য। যারা জীবন দিয়েছে, আহত হয়ে বেঁচে আছে, তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ। এই কমিশন ও সনদের সুযোগ তারা এনে দিয়েছে। তাই তাদের স্মরণ করাই আমাদের দায়িত্ব।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ দিয়ে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। আমরা পুরনো কথাগুলো পেছনে ফেলে নতুন কথাগুলো জাতীয় জীবনে, সংবিধান পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায়, সরকার পরিচালনায় নিয়ে এসেছি। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো।”

তরুণ জনগোষ্ঠীর শক্তি ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অংশ। সঠিক নিয়মে যদি এর ব্যবহার করি, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করি, তাহলে দুনিয়ার অনেক জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়বে। আমাদের জাহাজ আর আটকে থাকবে না সিঙ্গাপুরে।”

তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য দেশের জেলেরা এসে আমাদের সাগরে মাছ ধরে নিয়ে যায়, আর আমরা চেয়ে দেখি। কক্সবাজার, মহেশখালী ও মাতারবাড়িকে যদি আমরা যৌথভাবে উন্নত করি, তাহলে এই অঞ্চল নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। শুধু অর্থনৈতিক নয়, আমরা নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সেভেন-সিস্টার্স) সঙ্গে আত্মিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবো।”

অনুষ্ঠানে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের বহু মত, বহু পথ, কিন্তু মোহনা একটাই—গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়া। জুলাই জাতীয় সনদ সেই স্বপ্নের পথে প্রথম পদক্ষেপ। এটি এখন কেবল একটি দলিল নয়, একটি নতুন পথচলার সূচনা।”

তিনি বলেন, “এই অভিযাত্রায় সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত ও পথের পার্থক্য থাকতেই পারে, তবে সবাই মিলে যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়—এটাই প্রত্যাশা।”

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!