ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

‘তুই কোন হাত দিয়ে লিখিস, একটু দেখা’ বলেই শুরু হয় কোপানো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫

‘তুই কোন হাত দিয়ে লিখিস, একটু দেখা’ বলেই শুরু হয় কোপানো

ছবিঃ সংগৃহীত

বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত উদ্দিন হত্যাকাণ্ড

বাগেরহাটে বিএনপি নেতা ও সাংবাদিক এ এস এম হায়াত উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর অবশেষে মামলা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় নিহতের মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় মো. ইসরাইল মোল্লাকে প্রধান আসামি করে মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঘটনাটির নতুন তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যায় হায়াত উদ্দিন নিজ বাড়ির কাছের সিদ্দিকের চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত এসে তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাদের একজন বলে ওঠে, ‘তুই কোন হাত দিয়ে লিখিস, সেই হাতটা একটু দেখা।’ এতেই শুরু হয় হামলা। এরপর ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে নির্বিচারে কোপাতে থাকে হামলাকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, কোপে কোপে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হায়াত উদ্দিন। প্রাণভিক্ষা চাইলেও কেউ দয়া দেখায়নি। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হায়াত উদ্দিন (৪২) বাগেরহাট শহরের হাড়িখালি এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন এবং সম্প্রতি বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউই ভয়ে এগিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে হায়াত উদ্দিন পালানোর চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা তাঁকে ধাওয়া করে ফেলে দেয়। পুরো এলাকা আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হায়াত উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি অনিয়ম ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এসব কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হুমকির মুখে ছিলেন। কয়েক মাস আগেও তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল।

মামলার প্রধান আসামি ইসরাইল মোল্লা স্থানীয় বিএনপির কর্মী এবং ‘ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার সোসাইটি’র জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি মাহামুদ-উল-হাসান জানান, “নিহতের মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করতে ইতিমধ্যে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।”

হায়াত উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে বাগেরহাটে সাংবাদিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁরা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!