দেশকে রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ পরাস্তের একমাত্র উপায় হলো জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা— এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ায় কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের চলমান সংকটে ঐক্য অটুট রাখার কোনো বিকল্প নেই। তার ভাষায়, দেশের শত্রুরা জাতিকে বিভক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে, আর সেই প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গত ১৫ মাসের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র একত্রে মোকাবিলা করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
জুলাই জাতীয় সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সনদ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে এবং গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এমন এক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় আছে যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে, স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি রোধ করবে এবং নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত করবে। এই সংস্কার প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, কোনো বিদেশি প্রভাব ছাড়াই।
ড. ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতে রাজনৈতিক সংলাপে বিদেশি মধ্যস্থতার নজির থাকলেও এবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের উদ্যোগে সংকট সমাধানের পথ তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐক্যের উদাহরণ স্থাপন করেছে।
তিনি রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যারা এই সনদ প্রণয়নে কাজ করেছেন, তাদের প্রচেষ্টা জাতির জন্য ঐতিহাসিক সাফল্য। তার মতে, জুলাই সনদ শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের পুনর্গঠন কোনো ব্যক্তি বা একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়; এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এগিয়ে যেতে হবে।
বিবৃতিতে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা কমিশনের কার্যক্রমের পুরো সময়জুড়ে জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, একটি জবাবদিহিমূলক ও স্থায়ী রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় শুক্রবার (৩১ অক্টোবর)।

আপনার মতামত লিখুন :